শর্টকাট
অন্যান্য দেশে ইস্পর্টস একটি ভালো ক্যারিয়ার সুযোগ হলেও বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে এর প্রচলন নিষিদ্ধ। এর পিছনে রয়েছে অনেক কারণ এবং সুযোগের অভাব।
বাংলাদেশে ফ্রীল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং করা যায় বলে অনেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশে ইস্পর্টস-কেও একটি ক্যারিয়ার হিসেবে ভেবে থাকেন অনেক সময়। মুলত, দেশের বিভিন্ন নিয়ম নীতি ও আইন না জানার কারণেই এমন ভুল করে থাকেন অনেকেই।
তাই জানতে হবে। না জেনে ভুল করা থেকে জেনে নিজেকে সেফ রাখাই উত্তম। রাই আজকে ইস্পর্টস সম্পর্কে বিভিন্ন জানা অজানা তথ্য জানতে পারবেন।
ইস্পর্টস কী?
এর নাম শুনেছেন তবে এটি কী তা জানেন না এমন অনেকেই আছেন। মুলত ইস্পর্টস হলো একটি ইলেকট্রনিক গেমিং কম্পিটিশন। এই প্রতিযোগিতায় দেশ – বিদেশের গেমাররা অংশগ্রহণ করে থাকে।
এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা বেশিরভাগই টপ-লেভেল গেমার অথবা স্ট্রিমাররা হয়ে থাকেন। অন্যান্য প্রতিযোগিতার মতন এখানেও অর্গানাইযার এবং স্পন্সর এর ব্যবস্থা করা হয়। এখানে মুলত ভিডিও গেমস খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ই-স্পোর্টস শুধু মাত্র অনলাইন ভিডিও গেমসগুলোর সাথেই সম্পর্কিত।
সারা পৃথিবী জুরে ই-স্পোর্টস এর টোটাল ভ্যালু হচ্ছে প্রায় ১.০৮ বিলিয়ন ইউনাইটেড স্টেটস ডলার, যেখানে অনুমান করা হচ্ছে যে ২০৫০ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা সম্ভবত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির টোটাল ভ্যালুকেও পার করে ফেলবে।
আমাদের দেশে প্রায় কিছুদিন ধরে ই-স্পোর্টস সামাজিক মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে অনেক চর্চায় আসছে। এমনকি সোলাইমান সুখন -ও ই-স্পোর্টস নিয়ে তার একটি ভিডিওতে কিশোরদের মাঝে সারা জাগানোর চেষ্টা করেছেন।
কেনো ই-স্পোর্টস বাংলাদেশে একটি ক্যারিয়ার হিসেবে দেখা হয় না?
যেখানে অন্যান্য দেশে যেমন আমেরিকা, রাশিয়া, চাইনা এমনকি ইন্ডিয়ার মতো দেশেও ই-স্পোর্টস এর প্রচলন শুরু হয়েছে। যদিও পাবজি এবং ফ্রি-ফায়ার এর মতো গেমগুলো সেখানে ব্যান্ড করা হয়েছে।
আমাদের দেশে কেনো ই-স্পোর্টসকে এতোটা অবহেলা করা হচ্ছে?
আমাদের দেশে এখনো মানুষ ফ্রীল্যান্সার ও আউটসোর্সারদের কে বেকার হিসেবে চিনে থাকেন। এমনকি অনলাইন থেকে আয় করার বিষয় নিয়েও অনেকেই অবহেলা করেন। এখানে ই-স্পোর্টসকে অবহেলা করাটাই স্বাভাবিক।
কেননা ই-স্পোর্টস এমন একটি ক্যারিয়ার অপশন যার সাথে খুব অল্প সংখ্যাক মানুষই পরিচিত। তাছাড়া ই-স্পোর্টসকে আমাদের দেশে একটি ক্যারিয়ার হিসেবে মান্যতা দেওয়াতে হলে প্রয়োজন হবে অনেক কিছুর পরিবর্তন ও অনেক সুবিধার সৃষ্টিকরন।
প্রথমেই, আমাদের দেশে গেমিং কম্পিউটার কয়জন-ই বা ব্যবহার করে? বেশিরভাগই কম্পিউটার এর বিল্ড-আপ ইউটিউব অথবা কন্টেন্ট ক্রিয়েশন এর জন্য করা হয়। তাছাড়া, গেমিং কম্পিউটার এফর্ড করাও অনেক টাফ।
দ্বিতীয়ত, ভালো মোবাইল ব্যবহার করেও ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সম্ভব। তবে এর সাথেও যুক্ত আছে অনেক সমস্যা। আমাদের দেশে বেশিরভাগ জনগণের হাতের মোবাইলের বাজেট হলো ২০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকার মধ্যে।
যেখানে ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রয়োজন আইফোনের মতো মোবাইল যেগুলো স্মুথ গেমিং এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারবে।
বাংলাদেশে বেশিরভাগই পাবজি এবং ফ্রী-ফায়ার প্লেয়ার। এখানে যদি ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতা আয়োজন করাও হয় তাহলে লিমিটেড ভিডিও গেমসগুলকেই টার্গেট করা সম্ভব। আর এই গেমগুলোই বর্তমানে আমাদের দেশে ইল্লিগেল ও ব্যান করা হয়েছে।
তাই আপনি যদি কোথাও ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতা আয়োজন করে থাকেন তাহলে অবশ্য আপনাকে আইন ভাঙার দায়ে শাস্তি প্রদান করা হবে।
ই-স্পোর্টস নিয়ে আমার মতামত
আমাদের দেশ অনেকটাই পিছিয়ে আছে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায়। আফসোস যে আমাদের দেশের কিছু অশিক্ষিত মন্ত্রীরা দাবি করে থাকেন যে আমরা আমেরিকার মতো দেশকে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছি।
এ দেশে এখনো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রজেক্ট শুরু করা অসম্ভব, সে দেশ কীভাবে আমেরিকার, রাশিয়ার মতন দেশগুলোকে টেক্কা দিতে পারে? তাই এসকল মন্ত্রীদের কথা হাস্যকর নয় বরং দুঃখজনক মনে হয়।
যাইহোক, সাউথ কোরিয়া, জাপান, চাইনা, আমেরিকার মতো দেশে ই-স্পোর্টস একটি যোগ্য ও সফল ক্যারিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই দেশগুলোতে যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা থাকায় সেখানে ই-স্পোর্টস, ফ্রীল্যান্সিং, আউটসোর্সিং ইত্যাদি অনেক স্বাভাবিক ও সহজ মনে হয়।
তবে আমাদের জন্য এগুলো অসম্ভব বললেই যথেষ্ট। তাছাড়া আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বললে বলবো যে ই-স্পোর্টস এর মতন একটি ক্যারিয়ার আমাদের দেশে ইল্লিগেল থাকাটাই ভালো।
প্রতিটি দেশের মানুষের বিচারধারা ও স্বভাব ভীন্ন হওয়ায় এক দেশের স্বভাব অথবা প্রচলিত ধারা অন্য দেশের মানুষদের জন্য সহজ ও সঠিক না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আমাদের দেশে কয়জনেই বা পাবজি ও ফ্রি-ফায়ার এর মতো গেমগুলোকে নিজের আসক্তিতে পরিনত করে নি? প্রায় সংখ্যক কিশোর – কিশোরীরা এই গেমগুলোর আসক্তিতে এমন ভাবেই আসক্ত হয়েছে যে তাদের পড়ালেখা ও রাতের ঘুম দুটোই নষ্ট হয়েছে। এখন প্রায় কীশোররা গেম খেলতে খেলতে রাত ১০টার ঘুম দেয় ফজরের আজানের সময়।
অনেকেই জানেনা যে দেশের কিশোর – কিশোরীদের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ অনেক সময় দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশেও সমস্যা তৈরি করে। তাই আমাদের জানতে হবে। যেসকল কর্মকাণ্ড আমাদের দেশে অবৈধ করা আছে তা কোনো না কোনো কারণেই করা হয়েছে। হুট করে কোনোকিছু বৈধ করা হলেই দেশের উন্নয়ন হয়ে পরবে না।
ই-স্পোর্টসকে দেশে বৈধ করা মানে দেশে পাবজি ও ফ্রী-ফায়ার এর মতন গেমসগুলোকে বৈধ করা। ফ্রি-ফায়ার ও পাবজির মতন গেমসগুলোর কারণে যে দেশের কিশোর সমাজ কতটা ডাইভার্সিটির শিকার হয়েছে তা একটু গবেষনা করলেই বুঝতে পারবেন। মুলত এসকল ভিডিও গেমসগুলো অবৈধ করার কারণ হলো, এগুলোর প্রতি কিশোরদের অনাকাঙ্ক্ষিত আসক্তি। যেকোনো কিছুর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি আমাদের মানসিক ও শারিরীক কোনোটার ক্ষেত্রেই ভালো নয়।
আর তাছাড়া, দেশের আইন মোতাবেক যেকোনো জায়গায় একটা গেদারিং করানোর পুর্বে সরকার থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে। তবেই, আপনি একটি বিপুল সংখ্যক মানুষের একটি গেদারিং করতে পারবেন। তবে শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রে এমনটা করা ততটা আবশ্যক নয়।
তবে আপনি যদি ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্ট এর জন্য সরকারের নিকট একটি আবেদন করেও থাকেন, তবুও আপনার আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা, যেহেতু বাংলাদেশে ভিডিও গেমস-গুলোর মধ্যে রয়েছে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার এর মতো গেমস যা অবৈধ তাই আপনার আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হবে।
পরিশেষে —
আমাদের দেশে ই-স্পোর্টস একটি ক্যারিয়ার হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশও ই-স্পোর্টসকে অবৈধ করে রেখেছে। সুতরাং এদিক বিবেচনায় আনা হলে, ই-স্পোর্টস কখনো একটি বৈধ ক্যারিয়ার হিসেবে বিবেচিত হবে না। এটি সম্পুর্ন অবৈধ একটি ক্যারিয়ার।